একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে খরচের বিষয়টি নির্ভর হবে কোম্পানি অথরাইজড ক্যাপিটাল কত হবে তার উপর। অথরাইজড ক্যাপিটালের উপর ভিত্তি করে সরকারী তথা RJSC ফি নির্ধারণ হয়। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, অথরাইজড ক্যাপিটাল আর পেইড-আপ ক্যাপিটাল দুটো ভিন্ন বিষয়। অথরাইজড ক্যাপিটাল হচ্ছে আপনি এই কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা শেয়ার ইস্যু করত পারবেন। আর পেইড-আপ ক্যাপিটাল হচ্ছে শেয়ার হোন্ডারগণ এই মুহূর্তে কত টাকা শেয়ার গ্রহণ করেছেন। যেমন আমি কোম্পানির এমডি, আমি ২ লাখ টাকার শেয়ার গ্রহণ করলাম, আপনি কোম্পানির চেয়ারম্যান, আপনি দুই বা তিন লাখ টাকার শেয়ার গ্রহণ করেছেন। এভাবে সর্ব মোট ১ কোটি টাকা পর্যন্ত শেয়ার গ্রহণ করা যাবে। আমি বা আপনি তথা শেয়ার হোল্ডারগণ যে পেইড-আপের শেয়ার গ্রহণ সেই টাকাই কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে পরবর্তীতে ট্রান্সফার দিতে হবে। সুতরাং পেইড-আপ ক্যাপিটাল যা হোক না কেন অথরাইজড ক্যাপিটাল বেশী হলে ভালো। তাহলে পরবর্তীতে নতুন নতুন শেয়ার হোল্ডারের নিকট শেয়ার বিক্রি করা যায়।
বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের কোম্পানী রয়েছে- ১. প্রাইভেট লিমিটেড এবং ২. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী।
১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইন অনুযায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন অংশীদার বা পার্টনার প্রয়োজন হয় অপরদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ৭ জন এবং সর্বোচ্চ যেকোন সংখ্যার পার্টনার হতে পারে। সম্প্রতি কোম্পানী আইনের সংশোধন হয়েছে। এতে করে One Person Company (OPC) বা শুধু মাত্র একজন ব্যক্তির দ্বারা একটি কোম্পানী খোলার যাবে, তবে এটি এখনো কার্যকর হয়নি।
একটি কোম্পানী শুরু করার ক্ষেত্রে বেশকিছু লিগ্যাল কমপ্লায়েন্স রয়েছে। আপনার ব্যবসাটি যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা ছোট পরিসরে হয় তাহলে কোম্পানী না করাই ভাল। একটু বড় হলে পার্টনারশীপ করে নিতে পারেন। তার চেয়ে বড় হলে কোম্পানী গঠন করতে পারেন। ছোট পরিসরে একটা বিজনেস শুরু চাইলে শুধু মাত্র একটা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন- এক্ষেত্রে আপনি হবেন ঐ ব্যবসায়ের স্বত্বাধিকারী বা প্রোপাইটর বা মালিক। অপরদিকে আপনি যদি একটা কোম্পানী গঠন করেন, তখন আপনি হবেন ঐ কোম্পানীর চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ডিরেক্টরস্দের একজন, বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
একটি Private Limited Company নিবন্ধন করতে কি কাগজ-পত্র প্রয়োজন?
একটি কোম্পানি গঠন করতে প্রত্যেক জন শেয়ারহোল্ডারের নিচের কাগজপত্র ও তথ্যগুলো লাগবে।
- ভোটার আইডি বা পাসপোর্ট
- ইটিন কপি
- স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
- পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
- পিতা, মাতার নাম
- ফোন, ই-মেইল এড্রেস
- এছাড়াও প্রত্যেকের ব্যাংক একাউন্ট ও চেক বই থাকতে হবে (যদিও এই তথ্য প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজন নেই)
- প্রত্যেক অংশীদারের এই তথ্য ছাড়াও কোম্পানির জন্য একটি ঠিকানা প্রয়োজন হবে।
- স্বাক্ষরিত IX ফরম
- সংঘ বিধি ও সংঘ স্মারক
- বিদেশী শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালক পাসপোর্ট অনুলিপি
Privet Limited Company নিবন্ধন করতে কতদিন প্রয়োজন?
উত্তর: ১০ থকে ১৫ কার্যদিবস
কোম্পানি নিবন্ধন পরবর্তী কার্যক্রম কি কি?
- নিয়ম হচ্ছে কোম্পানি নিবন্ধনের পূর্বেই কোম্পানির নামে একটি ব্লক ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং প্রত্যেক শেয়ার হোল্ডারের পেইডআপ তার নিজস্ব ব্যাংক থেকে কোম্পানির ব্যাংকে হয় ক্রস চেকে অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। যদি তা শুরুতে তা করা না যায় তাহলে কোম্পানি নিবন্ধনের ১ মাসের মধ্যে পেইডআপ পরিশোধ করতে হবে।
- কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স করা
- কোম্পানির নামে ই-টিন নিবন্ধন করা এবং নিয়মিত ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা
- কোম্পানির নামে ভ্যাট নিবন্ধন করা এবং নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করা
- নিয়মিত এজিএম করা এবং রিটার্ন দাখিল করা
- কোম্পানির নাম সুরক্ষায় ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করে নেওয়া
কোম্পানির কিছু টার্মস (শব্দ) ও অর্থ
অংশীদার / শেয়ার হোল্ডার: যারা একটি কোম্পানিতে অংশীদার হবেন, অর্থাৎ টাকা দিয়ে কোম্পানির মালিক হবেন তারা হচ্ছেন অংশীদার বা শেয়ার হোল্ডার। এই অংশীদাররা তাদের অংশের অনুপাতে লাভ [পক্ষান্তরে ক্ষতি] নিয়ে থাকবেন। প্রাইভেট কোম্পানিতে এই অংশীদারদের সংখ্যা ১-৫০ জন পর্যন্ত হতে পারে।
ডিরেক্টর : সাধারণত অংশীদারদের একটা ক্ষুদ্র অংশ, ২-৫ জন ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন। এরা বার্ষিক সাধারণ সভাতে উপস্থিত থাকেন, কোম্পানির হয়ে কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
বোর্ড অব ডিরেক্টরস : কয়েকজন ডিরেক্টর মিলে, সাধারণত ৩-৫ জন একটি বোর্ড অব ডিরেক্টরস তৈরি করে যারা কোম্পানি পরিচালনা করেন।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর : সাধারণ অংশীদার বা মালিকদের মধ্য থেকে একজন [সাধারণত যার শেয়ার বেশি থাকে তিনি] ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে থাকেন। সাধারণত ম্যানেজিং ডিরেক্টর একটা কোম্পানির সকল সিদ্ধান্ত নেন। একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কোম্পানি যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সকল ক্ষমতা থাকে।
চেয়ারম্যান: অংশীদারদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান হন। চেয়ারম্যান মূলত কোম্পানির মিটিংগুলোতে সভাপতিত্ব করেন ও প্রয়োজনে মিটিঙের সিদ্ধান্তে ভোট প্রদান করেন।
পেইড আপ ক্যাপিটাল: কোন কোম্পানি যত টাকা দিয়ে শুরু হবে সেটা হচ্ছে সেই কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটাল।
অথরাইর্জড ক্যাপিটাল: কোন কোম্পানি কত টাকা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে চায় বা নিতে চায় সেটা হচ্ছে অথরাইজড ক্যাপিটাল।
মেমরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন: এটি একটি দলিল, এই দলিলে একটি কোম্পানি কি কাজ করবে তা উল্লেখ থাকে।
আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন : এটি একটি দলিল, এই দলিলে একটি কোম্পানি কিভাবে কাজ করবে তা উল্লেখ থাকে।
অথরাইজড ক্যাপিটাল Authorized Capital কি?
একটি কোম্পানী শুরুর সময় ঐ কোম্পানীর সর্বোচ্চ মূলধনের যে সীমা নির্ধারন করা হয় বা অনুমোদন করা হয় সেটাই হল ঐ কোম্পানির অথরাইজড ক্যাপিটালG মনে করুন, আপনার কোম্পানীর অথরাইজড ক্যাপিটাল ১০০ টাকা, এবং পার্টনার ১০ জন, তাহলে ১০ টাকা করে দশ জনের ভেতর সর্বোচ্চ ১০ টি শেয়ার বন্টন করা যাবে। এর বেশী শেয়ার বন্টন করা যাবে না। বেশী করতে চাইলে অথরাইজড ক্যাপিটাল আবার সংশোধন করে বাড়িয়ে নিতে হবে।
পেইড-আপ ক্যাপিটাল Paid-up Capital কি?
পরিশোধিত মূলধন বা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হল অনুমোদিত বা অথরাইজড ক্যাপিটাল সীমার মধ্যে একটা এমাউন্ট যা কোম্পানীর ব্যাংক একাউন্টে জমা শুরতে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশে একটা কোম্পানী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নূন্যতম ১ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল থাকা দরকার হয়। মনে করুন, ১০০ টাকা অথরাইজড ক্যাপিটালের মধ্যে ১০ জন শেয়ার হোল্ডার মিলে ৫০টাকার শেয়ার ধারন করেছে যাকে পেইড-আপ ক্যাপিটাল বলে। এই ৫০ টাকা কোম্পানীর ব্যাংক একাউন্টে জমা দিতে হবে। এই টাকা পরে ব্যাবসায়ীক প্রয়োজনে যে কোন সময় উত্তোলন ও খরচ করা যায়
Memorandum of Article (MOA) বা সংঘ স্মারক কি?
মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন হল কোম্পানির লক্ষ ও কার্যাবলী সম্পর্কে বর্ণনা, এতে ব্যবসায়ের নাম, ব্যবসার ধরন, ব্যবসার লক্ষ-উদ্দেশ্য, অনুমোধিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে অবশ্যই লিমিটেড শব্দটি থাকতে হবে।
Article of Association (AOA) বা সংঘবিধি কি?
আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন কোম্পানির পরিচালনার নিয়মাবলী অর্থাৎ আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনের মধ্যে থাকবে কীভাবে কোম্পানি পরিচালক পরিশধ নির্বাচিত হবে, AGM, কোম্পানির সাধারন মিটিং এবং বিশেষ মিটিং কীভাবে কখন সম্পাদিত হবে, কীভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোন সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যংশ বন্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়।
Company Registration শেষে কি কি ডকুমেন্ট পাবেন?
আপনার কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়ে গেলে আপনি একে একে তিনটি দলিল পাবেন। দলিল তিনটি হচ্ছে।
- Certificate of Incorporation
- Certified copy of Article of Association (AOA) and Memorandum of Association (MOA)
- Form XII
Company Director বা পরিচালক কে?
প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা কমপক্ষে দুজন (আবাসিক কিংবা অনাবাসিক) হতে হবে এবং পরিচালকবৃন্দের পদবী এবং শেয়ারের সংখ্যা স্পষ্টভাবে কোম্পানির সংঘবিধিসমুহে (Articles of Association) উল্লেখ থাকতে হবে। এর সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে ১৮ বছরের কম কিংবা দেউলিয়া কিংবা কোনোরূপ আর্থিক অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা প্রমাণিত হলে পরিচালকগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
Company Share Holder বা অংশীদারগণ কে?
একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির অংশীদারের সংখ্যা হতে পারে সর্বনিম্ন ২ জন হতে সর্বোচ্চ ৫০ জন। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য এ সংখ্যা হবে সর্বনিম্ন ৭ জন এবং এর বেশী। কোন কোম্পানির অংশীদার কোন ব্যাক্তি ও হতে পারেন কিংবা অন্য কোন একটি কোম্পানিও হতে পারে এবং কোম্পানির পরিচালকগণও কোম্পানির অংশীদার হতে পারেন।
কোম্পানি নিবন্ধনের ঠিকানা কি?
কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য অবশ্যই একটি প্রাসঙ্গিক ঠিকানা (আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক) প্রদান করতে হবে যা কোম্পানির নিবন্ধিত ঠিকানা বলে বিবেচিত হবে