ট্রেডমার্ক প্রতীক এর অর্থ কি ?
ট্রেডমার্কের ধরন বোঝানোর জন্য কিছু প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সেসব প্রতীকের বিশেষ অর্থ রয়েছে। সাধারনত R, TM, SM এই তিনটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম্নে প্রতীকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো
১) R প্রতীক : ইংরেজী বর্ণ “R” কে গোল চিহ্নের ভিতরে রেখে ট্রেডমার্ক বা লোগোর পাশে কিংবা কোণায় এটি বসানো হয়। এটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ট্রেডমার্কটি যথাযথ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত ও নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক।
২)™ প্রতীক : ইংরেজি বর্ন “T” এবং “M” এর সমন্বয়ে (Trade Mark) যে প্রতীকটি ব্যবহৃত হয় সেটি হলো অনিবন্ধিত পণ্যের লোগোতে ব্যবহৃত প্রতীকটি। এই প্রতীকটি নিবন্ধিত পণ্যের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। এটি সাধারণত ক্রেতার কাছে পণ্যের ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে।
৩) ℠ প্রতীক : Service Mark বা “SM” প্রতীকটি পণ্যের মতো অনিবন্ধিত সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ অনিবন্ধিত পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন ™ প্রতীক ব্যবহৃত হয় তেমনি অনিবন্ধিত সেবার ক্ষেত্রে ℠ প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সেবা বলতে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, বিমান, হাসপাতাল পরিসেবা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়। তবে এসব প্রতিক ব্যবহার করার পূর্বে ভালো ভাবে যেনে নিতে হবে।
ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশনের সময়সীমা
ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ থাকে ৭ বছরের জন্য। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নবায়নের আবেদন করলে ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যায়। মেয়াদ উত্তীর্ণ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কোন ধরনের মার্ক নিবন্ধন করা যায় না?
ট্রেডমার্ক আইনের ধারা ৬ এবং ৮ অনুসারে কুৎসামূলক বা দৃষ্টিকটু মার্ক; বিদ্যমান কোনো আইনের পরিপন্থী মার্ক, প্রতারণামূলক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী মার্ক, সাদৃশ্যপূণ মার্ক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন
মার্ক; কোন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অফিসের নাম, মনোগ্রাম, মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো মার্ক, ব্যবহার করা যাবে না।
ট্রেডমার্কের ফৌজদারী আইন
মিথ্যা ট্রেডমার্ক বা ট্রেডমার্কের বর্ণনা ব্যবহার, ট্রেডমার্ক জাল করা ও ট্রেডমার্ক জাল করার যন্ত্র আত্মসাৎ করা ইত্যাদি হলো দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৮২, ৪৮৩ এবং ৪৮৫ ধারার অপরাধ। এই কাজের শাস্তি হলো সর্বোচ্চ ২ বছর থেকে সর্বনিম্ন ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং সেই সাথে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ এবং সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
ট্রেডমার্ক বলতে কী বুঝায়?
ট্রেডমার্ক হচ্ছে উৎপাদনকারী কর্তৃক তার উৎপাদিত পণ্য বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের বিক্রিতব্য পণ্যের ওপর দেওয়া একটা চিহ্ন যা দেখে ভোক্তাসাধারণ সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সুনাম বা বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হলে সেই চিহ্ন দেখে পণ্যের অর্ডার দেওয়া বা ক্রয় করে। উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেওয়ার পরিবর্তে সেই চিহ্নের সাথে পরিচিত হওয়াটাই বেশি প্রচলিত ও বেশি সুবিধাজনক। একই জাতীয় পণ্যের উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা অনেক ট্রেডমার্ক স্বতন্ত্র হওয়ায় এ ট্রেডমার্ক দেখেই ক্রেতা সাধারণ তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। ফলে ট্রেডমার্কের সাথে উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ট্রেডমার্কের সুনাম প্রতিষ্ঠিত হলে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে আসে। কাজেই ট্রেডমার্কে একটা স্বার্থ বা অধিকার অর্জিত হয় যা আইন দ্বারা রক্ষা করা প্রয়োজন। প্রাচীনকাল থেকেই সকল দেশে ট্রেডমার্কের ব্যবহার হয়ে আসছে এবং কমল ল' দ্বারা সেগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে বিধিবদ্ধ আইন প্রণয়ন করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক কমন ল' দ্বারা এবং নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ২০০৯ সালের ট্রেডমার্ক আইন বলবৎ আছে এবং এর পূর্বে ১৯৪০ সালের ট্রেডমার্ক আইন প্রচলিত ছিল।
কমন ল' অনুসারে ট্রেডমার্ক হচ্ছে একটি শব্দ, কৌশল বা লেবেলের আকাশে দৃশ্যমান কোন প্রতীক যা ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর লাগানো হয় এ উদ্দেশ্যে যে, ক্রয়েচ্ছু জনগণকে বুঝানো যে ঐ পণ্য চিহ্ন প্রদানকারী বিশেষ ব্যক্তি কর্তৃক উৎপাদিত বা বিক্রীত যা অনুরূপ পণ্য অন্যান্য উৎপাদনকারী যা বিক্রেতা হতে স্বতন্ত্র। [A trade mark is a visual symbol in the from of a word, a device or a label applied to articles of commerce with a view to indicate to the purchasing public that they are the goods manufactured or otherwise dealt is by a particular or person as distinguished from similar goods manufactured or dealt in by other persons]
বাংলাদেশের ‘ট্রেডমার্ক' আইন ২০০৯ এর ২ (২৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, মার্ক হচ্ছে কোন ডিভাইস, ব্রান্ড, শিরোনাম, লেবেল, টিকেট, নাম, স্বাক্ষর, শব্দ, অক্ষর, প্রতীক, সংখ্যা, রং বা এগুলোর যেকোনো সমন্বয়, ২ (৮) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘ট্রেডমার্ক অর্থ কোন নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক অথবা কোন পণ্যের সহিত ব্যবহৃত এমন কোন মার্ক যাতে ব্যবসায়িক উক্ত পণ্যের ওপর মার্ক ব্যবহারকারী স্বত্বাধিকারীর অধিকার রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়; কোন সেবার সহিত ব্যবহৃত এমন কোন মার্ক যাতে ব্যবসায়িক উক্ত সেবার ওপর মার্ক ব্যবহারকারীর স্বত্বাধিকারীর অধিকার রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেবার সহিত ব্যবহৃত মার্ককে সার্ভিস মার্ক বলে। যেমন- হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিমান, লঞ্চ, ভাড়ায় চালিত কার, এজেন্সি ইত্যাদি।
কেন ট্রেডমার্ক Registration করা প্রয়োজন?
একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা যেকোন আইন সিদ্ধ সত্ত্বাই ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হতে পারে। সাধারণত ট্রেডমার্ক পণ্যের মোড়কের গায়ে, চালানপত্রে অথবা পণ্যের রসিদে অঙ্কিত থাকে।
এছাড়া সত্ত্বাধিকারীর ব্যবসায়িক স্থাপনায়ও এই প্রতীক প্রদর্শিত হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র পণ্যের মালিকানা স্বত্ব দাবি করার জন্য সাধারণত ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা হয়। সত্ত্বাধিকারী ব্যতীত অন্য কেউ কোন পণ্যের ট্রেডমার্ক নিয়ে ব্যবসা করলে বা বিজ্ঞাপন দিলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং পরবর্তীতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হওয়া ছাড়াও এটি লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। সচরাচর বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ ট্রেডমার্কের লাইসেন্স করার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা ও বিপণন করে থাকে। ট্রেডমার্কের অবৈধ ব্যবহার করে নকল পণ্য বা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ব্রান্ড পাইরেসি বলা হয়।
ব্রান্ড পাইরেসির শিকার হলে ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। অধিকাংশ দেশেই স্বত্ত্বধিকারীকে আইনি সহায়তা পেতে হলে ট্রেডমার্কের নিবন্ধন করিয়ে নিতে হয়।
ট্রেডমার্কের সুবিধা কি কি?
ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্বের বেশ কিছু সুবিধার কারণেই মূলত এটি বেশ জনপ্রিয়। ট্রেডমার্ক মূলত কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর এক মূল্যবান সম্পদ। ট্রেডমার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে স্বত্বাধিকারীরা দীর্ঘসময় ধরে তার পণ্যের উপর একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে। এছাড়া ট্রেডমার্ক ব্যবহারের কারণে ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরী হয় এবং এর ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠান যেকোনো ধরনের পণ্য বাজারে এনে খুব দ্রুত লাভবান হতে পারে। অপরদিকে, ট্রেডমার্ক বা ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিরূপ হতে পারে, সে সম্পর্কে ক্রেতার একটি ধারনা তৈরী হয়। এছাড়া ক্রেতা পণ্যটি সংগ্রহ করার পর নষ্ট বা ব্যবহার অযোগ্য হলে আইনগত সুবিধা লাভ করতে পারে। ট্রেডমার্কের কারণে বিক্রেতারা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। যেমন পণ্যের দাম নিয়ে অহেতুক ক্রেতার সাথে সময় নষ্ট করতে হয় না। ট্রেডমার্কের বা ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে বিক্রেতাগণ, পরিবেশক এবং ডিলারগণ শো-রুমের মাধ্যমে উক্ত পণ্য বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন।
ট্রেডমার্ক ক্লাস কি?
ট্রেডমার্ক নাইস শ্রেণীবিন্যাস যা পণ্য ও পরিষেবার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন হিসাবে পরিচিত হয় অনুযায়ী 45 বিভিন্ন ক্লাসের পৃথকীকৃত করা হয়। ঐ 45 শ্রেণীর মধ্যে 34 শ্রেণীর সামগ্রী ধারার অধীন আসা এবং 11 শ্রেণীর সার্ভিস ধারার অধীন আসা। প্রতিটি বর্গ পণ্য ও পরিষেবার কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর দেখায়। যদিও ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য আবেদন, এটা ঠিক বর্গ চয়ন করা প্রয়োজন। যখন আপনার পণ্য বা সেবার যথাযথ বর্গ নির্বাচন ট্রেডমার্ক অনুসন্ধান সম্পন্ন করা হয়। এই শ্রেণীবিভাগ প্রায় 80,000 পণ্য হয়।